জাহাজ ভাঙা শিল্পে জাদুর মেশিন!

Passenger Voice    |    ০৬:২৭ পিএম, ২০২৪-০৩-০৬


জাহাজ ভাঙা শিল্পে জাদুর মেশিন!

ফুটবল মাঠের সমান একেকটি জাহাজ। সেই জাহাজ কেটে নানা পুরুত্বের লোহার পাতের বড় বড় টুকরা করা হয়। মান ও আকারভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় এসব। কিন্তু লম্বা, মাঝারি আকারের কিছু টুকরার শেষ গন্তব্য স্টিল মিল। সেখানে গলিয়ে, শোধন করে তৈরি হয় নতুন রড। এ কাজটি সহজতর করতে বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পে একটিমাত্র জাদুর মেশিন বসানো হয়েছে কবির শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটিজে।  সীতাকুণ্ডের শীতলপুরের এই গ্রিন শিপ ইয়ার্ডের এক কোণায় বেশ বড় এলাকা নিয়ে বসানো হয়েছে ভার্টিক্যাল শেয়ারিং মেশিনটি।  

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিদ্যুৎচালিত স্বয়ংক্রিয় এ মেশিনে মেটাল শিপটিং স্ক্যাবেটারের ধাতব হাত (গ্র্যাব) অনায়াসে লোহার লম্বা লম্বা পাত তুলে দিচ্ছে। নিমিষেই তা নির্দিষ্ট আকারের টুকরা হয়ে বেল্টের সাহায্যে বেরিয়ে আসছে। আরেকটি ম্যাগনেটিক স্ক্যাবেটার দ্রুততার সঙ্গে এসব টুকরা ট্রাকে লোড দিচ্ছে। যা চলে যাচ্ছে সরাসরি স্টিল মিলের চুল্লিতে।  

প্রকৌশলী টিকলু জানান, এ মেশিনটি ঘণ্টায় ১০০০ এমএম সাইজের ১৬-১৭ টন স্টিল টুকরা করতে পারে। সর্বনিম্ন ৭০০ এমএম পর্যন্ত কাটা যায়। প্রোগ্রাম সেট করে দিলে সেই অনুযায়ী কাটতেই থাকে।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে ইতালি থেকে এ মেশিনটি সংগ্রহ করা হয়। ২৫০ কিলোওয়াটের অটোমেটিক মেশিন এটি। দিনে ১৮ ঘণ্টা চালাতে পারি। চারজন প্রকৌশলী পালাক্রমে এ মেশিনটি দেখাশোনা করি।

তিনি জানান, এ মেশিনের ধাতব বেল্ট শুধু এমএসের (লোহা) টুকরা নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপ করে। তামা, অ্যালুমিনিয়াম, এসএস ধরবে না। এগুলো আলাদা পথে বেরিয়ে আসে।

এ মেশিনে উপযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর ফলে বড় টুকরা কাটার জন্য গ্যাস লাগছে না, জনশক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে না। তাই এটি পরিবেশবান্ধব, সময়সাশ্রয়ী।

কেএসআরএম গ্রুপের সিইও মেহেরুল করিম জানান, গ্রিন ইয়ার্ড করার জন্য ২০১৪ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু করি আমরা। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আমাদের জানিয়েছিল ইয়ার্ডের উন্নয়ন করতে হবে। তখন আমরা গ্রিন সার্টিফিকেট পেতেও কাজ শুরু করি।  ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রথম গ্রিন সার্টিফিকেট পাই। এখন তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রিন সার্টিফিকেট পেয়েছি।  

গ্রিন ইয়ার্ড করার খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই ধরনের খরচ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং আর্থিক বিনিয়োগ। আমরা যন্ত্রপাতি কিনেছি। জনবল প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ৩০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য পরিবেশ ও জনশক্তির নিরাপত্তা।

সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশে এ শিল্পে স্ক্র্যাপের পাত, টুকরা লোড-আনলোড করছি অটোমেটিক, ম্যাকানিক্যাল। আমাদের ভার্টিক্যাল শেয়ারিং মেশিনটি বাংলাদেশের কোনো শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে নেই।  

 

প্যা/ভ/ম